• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বিএনপির দারুস সালাম থানা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক সায়েম বহিষ্কার স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল নির্দিষ্ট ফেডারেল চাকরিতে ডিগ্রির বাধ্যবাধকতা তুলে দিতে চান কমলা কারিগরি শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির জন্য ব্লকড অ্যাকাউন্ট সংশোধনের নির্দেশনা মির্জা ফখরুলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারের বৈঠক অতি দ্রুত যেন সংস্কারগুলো করা হয়: অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল ২৭৯ সিম কার্ড ও ৭৬ মুঠোফোনসহ হাতিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান আটক আবু সাঈদ হত্যা: বরখাস্ত দুই পুলিশ সদস্যের ৪ দিনের রিমান্ড বিটিআরসির চেয়ারম্যান হলেন মেজর এমদাদ উল বারী সিরাজগঞ্জে দুই ভাইকে হত্যায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড
নোটিশ ::
Wellcome to our website...

কী করবে হাসিনাকে নিয়ে দিল্লি?

রিপোর্টারের নাম / ৪০ বার
আপডেট সময় :: মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫ই আগস্ট হাসিনার নাটকীয়ভাবে ক্ষমতা হারানোর পর তিনি একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান।

গণমাধ্যমের বিভিন্ন খবরে বলা হয়েছিল শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে আশ্রয়ের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দেশগুলো জানিয়ে দিয়েছে তাদের দেশে হাসিনার জায়গা হবে না। এই পরিস্থিতিতে তাকে হয়ত ভারতেই রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে থাকতে হবে নাহয় তাকে দেশে ফিরে আসতে হবে। বিবিসির প্রতিবেদন।

এখানে দেখার বিষয় ভারত হাসিনার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়। তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, যদি হাসিনা স্থায়ীভাবে ভারতে অবস্থানের সুযোগ পান তাহলে তা দিল্লিকে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সাথে সম্পর্ক গড়তে চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। যদি এমনটাই ঘটে তাহলে দিল্লির কূটনীতি মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

কেননা ভারতের কাছে বাংলাদেশ শুধুমাত্র প্রতিবেশী দেশই নয়। দিল্লির কৌশলগত অংশীদার হচ্ছে বাংলাদেশ। এছাড়া ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘনিষ্ঠ মিত্র হচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে ভারতের জন্য বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এতে বলা হয়, দুই দেশের মোট সীমান্ত ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে যদি কখনও বিদ্রোহ দেখা দেয় তাহলে তা বাংলাদেশের সাহায্য ছাড়া মোকাবিলা করা দিল্লির জন্য কঠিন। কেননা রাজ্যগুলোর গোষ্ঠীগুলো নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে প্রবেশ করা তুলনামূলকভাবে সহজ। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতিগত বিদ্রোহীদের দমন করতে ভারতের তেমন বেগ পোহাতে হয়নি। কেননা হাসিনা ভারতের সাথে বেশ কয়েকটি সীমান্ত বিরোধও বন্ধুত্বপূর্ণভাবে নিষ্পত্তি করেছিলেন। সীমান্ত নিরাপত্তা মূলে থাকলেও আর্থিক দিকও এখানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের বিকাশ ঘটে। ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের সড়ক, নদী এবং রেল পথ ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে। ২০১০ সাল থেকে ভারত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশকে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দিয়েছে। তবে হাসিনার এমন আকস্মিক ক্ষমতা হারানোয় পুনরায় বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা দিল্লির জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।

ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছেন,‘এটি এই অর্থে একটি ধাক্কা যে আমাদের আশেপাশে যেকোনো অশান্তি সবসময়ই অবাঞ্ছিত।’ তবে সাবেক এই কূটনীতিক জোর দিয়েছিলেন যে, দিল্লি ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে কাজ করবে। কেননা এর কোন বিকল্প নেই এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণভাবে যা করবে তা ভারত নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সময় ক্ষেপণ করেনি। যাইহোক, গত ১৫ বছর ধরে হাসিনা এবং তার আওয়ামী লীগের প্রতি অটল সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ভারত বিরোধীতার জন্ম নিয়েছে তা লাঘবে দিল্লির আরও সময় লাগবে। শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশে যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে তার স্বচ্ছতা নিয়ে বেশ উদ্বেগ রয়েছে জনগণের। তবে জনগণের এমন উদ্বেগকে উপেক্ষা করে ক্রমাগতভাবে হাসিনাকে সমর্থন করায় দিল্লির প্রতি বাংলাদেশের মানুষের যে আক্রোশ বেড়েছে তা বিগত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। হাসিনার পতনের সাথে দিল্লির ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতিটি আরেকবার ধাক্কা খেল। কেননা বাংলাদেশ ভারতের আধিপত্য বিস্তারের যেকোনো প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে মালদ্বীপ এবং নেপালের পথেই হাঁটবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দিল্লি যদি একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসাবে তার মর্যাদা রক্ষা করতে চায় তবে অন্য প্রতিবেশী দেশে তার প্রভাব বজায় রাখতে হবে। যেহেতু ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী চীনও এই অঞ্চলে প্রভাবের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। গত বছর ভারতের চোখের সামনেই ভারত-বিরোধীতা করে মালদ্বীপের ক্ষমতায় এসেছে মোহাম্মদ মুইজ্জু। ঢাকার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ভারতের জন্য তার আঞ্চলিক নীতি সম্পর্কে কিছু আত্মসমালোচনা করার সময় এসেছে। তিনি বলেছেন, দিল্লিকে দেখতে হবে তার আঞ্চলিক অংশীদাররা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি যথাযথভাবে গ্রহণ করেছে কিনা। এক্ষেত্রে দেবপ্রিয় শুধু বাংলাদেশকেই উদ্দেশ্য করেননি, তিনি এই অঞ্চলের সব দেশের কথাই বুঝাতে চেয়েছেন।

হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে এটি স্পষ্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নিকটবর্তী সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই। এক্ষেত্রে ভারত যদি আওয়ামী লীগের বিকল্প কাউকে তাদের কাছে টানতে না পারে তাহলে তাদের জন্য বিষয়টি খুব জটিলই বটে। বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির এক নেতা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারে তাহলে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপির সাথে ভারতের সম্পর্ক কতটা জোরালো। যেহেতু অতীতে তাদের সুসম্পর্কের কোনো নজির নেই। অন্যদিকে বাংলাদেশে নিজেদের সম্পর্ক জোরালো করতে চীনও বেশ জোরালো উপস্থিতি জানান দেয়ার চেষ্টা করছে। কেননা ভারতের সাথে আঞ্চলিক আধিপত্যের লড়াইয়ে বেইজিং বাংলাদেশে তার পদচিহ্ন প্রসারিত করতে আগ্রহী। নির্বাচনে জয়ের পর মুইজ্জুর জন্য চীন লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়েছিল। সুতরাং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একই পরিণতি এড়াতে চাইবে দিল্লি। ভারতীয় পণ্য ও বাণিজ্যের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা ও কূটনৈতিক কৌশল তৈরি করার চেষ্টা করবে।

এক্ষেত্রে হাসিনার উপস্থিতিকে ঘিরে দিল্লিকে সাবধানে পা ফেলতে হবে। বিশেষ করে যদি অন্তর্বর্তী সরকার হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত দেয়ার অনুরোধ করে। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ভারতে হাসিনাকে কীভাবে আতিথেয়তা করবে তাতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু দিল্লি থেকে হাসিনা কীভাবে দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেন তা বাংলাদেশিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যদি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাহলে তা বৈরী আচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর