প্রথম বর্ষেই বিবাহিত এক ছাত্রীর প্রতি আমরা শিক্ষকরা একবার খুব বিরক্ত হয়েছিলাম যখন তার অবিদ্যালয়িক পাঠ গ্রহণের সাথে সাথে পরীক্ষা কার্যক্রমকেও দীর্ঘায়িত করতে হলো ‘অসময়-মা’ হওয়ার ঘটনায়। শিক্ষার্থীদের বিয়ে, বাচ্চা-কাচ্চা প্রায়শই একাডেমিক জটিলতা সৃষ্টি করলেও বৃহৎ বিদ্যায়তনগুলোতে শেষ পর্যন্ত তা মানবতায় সুরাহা হয়।
অনেকদিন পর সেই ছাত্রীকে গবেষণাগারে কাছাকাছি পেলাম ওর থিসিসের প্রয়োজনে, চার সহপাঠী ল্যাবমেটের মধ্যে ওর সিজিপিএ কিছুটা বেশি শুনে আমার সেদিনের বিরক্তি প্রশমিত হলো। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম মেয়েটির চলা-বলা যেন প্রাণহীন, সহপাঠীদের থেকে আলাদা করে ওকে ম্রিয়মান লাগলো; দিন দিনই মনে হয় ন্যাপথালিনের বলের মত উবে ছোট হয়ে যাচ্ছে মেয়েটি। অথচ ফাঁক পেলেই বই একটা খুলে কী দেখে, ঠিক সাহস করে পড়েও না, যেন হাতড়ে বেড়ায় কোন যন্ত্র যা দেবে নিমিষেই অফুরান শক্তি।
থিসিসের কাজ বোঝার সুবিধার্থে কয়েকটা গবেষণা প্রবন্ধ পড়তে দিয়েছিলাম, বলাই বাহুল্য; ল্যাবের কায়িক-কর্ম রোবটিকভাবে করলেও গবেষণার গো বা এষণা তথৈবচ। তারপর থিসিস লেখা প্রসঙ্গ আসতেই ওকে ফ্যাকাশে দেখালো মুহূর্তে। একটু খটকা লাগলো, আর্থিক অসঙ্গতি বা কম্পিউটার না থাকাটা এই ডিজিটাল সময়েও এত ভড়কে যাবার কারণ হতেই পারে না। ক্রমে জানা গেলো আমাদের অধিক-আলাপিত প্রথম বর্ষের সেই ‘শুভ-বিবাহের’ শুভ ‘উড়িয়া গিয়াছে’।