ফ্রী বাংলাদেশ টুডে ডেস্ক:
মোহাম্মদ মুরসি ছিলেন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মিশরের প্রথম প্রেসিডেন্ট। এক যুগ আগে উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে স্বৈরতন্ত্র বিরোধী যে গণবিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, সেটির ধাক্কায় পতন ঘটে মিশরের তিন দশকের শাসক হোসনি মোবারকের।
এরপর ২০১২ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে মিশরের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসেন মুরসি। কিন্তু তার মেয়াদকাল বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
মাত্র এক বছরের মাথায় সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি, যিনি সেই সময় দেশটির সামরিক বাহিনীর প্রধান ছিলেন।
ক্ষমতাচ্যুত করার পর একাধিক অভিযোগ তুলে মুরসিকে গ্রেফতার করা হয় এবং তিনি কারাবন্দী অবস্থাতেই ২০১৯ সালের ১৭ জুন যারা যান।
মুরসির মৃত্যুর পাঁচ বছর পর অনেকেই তাকে স্মরণ করছেন আরব বসন্ত খ্যাত স্বৈরতন্ত্র বিরোধী সেই গণবিক্ষোভের ‘ট্র্যাজিক হিরো’ বা ‘দুর্ভাগা নায়ক’ হিসেবে।
কিন্তু কেন মুরসিকে আরব বসন্তের ‘ট্র্যাজিক হিরো’ বলা হচ্ছে? তার এই ট্র্যাজেডির পেছনের কারণগুলোই বা কী?
সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে জেনে নেয়া যাক, মোহাম্মদ মুরসি আসলে কে ছিলেন এবং মিশরের রাষ্ট্র ক্ষমতায় কিভাবে তার উত্থান ও পতন হয়েছিল।
মোহাম্মদ মুরসি ছিলেন মিশরের ইসলামপন্থী আন্দোলন মুসলিম ব্রাদারহুডের একজন শীর্ষ নেতা।
১৯৫১ সালে মিশরের শারকিয়া প্রদেশের আল-আদওয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষা জীবনে মুরসি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র ছিলেন। সেখানে স্নাতকোত্তর শেষ করার পর পিএইচডি করার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।
পিএইচডি শেষে আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে মুরসি পুনরায় মিশরে ফিরে আসেন এবং জাগাজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন।
এর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি মিশরের ইসলামপন্থী আন্দোলন মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং ক্রমেই সংগঠনটির একজন শীর্ষ নেতা হয়ে ওঠেন।
এরপর ২০০০ সালে পাঁচ বছরের জন্য সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মুরসি। এই নির্বাচন তিনি করেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। কারণ এখনকার মতো তখনো মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়ায় মোহাম্মদ বুয়াজিজি নামের একজন ফেরিওয়ালা নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন।
জানা যায় যে- প্রশাসনের দুর্নীতির প্রতিবাদে তিনি গায়ে আগুন দিয়েছিলেন। এ ঘটনার পর তিউনিসিয়ায় সরকার বিরোধী গণবিক্ষোভ শুরু হয়, যা কিছুদিনের মধ্যে মিসর, সিরিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইন, লিবিয়া-সহ অন্যান্য আরব দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।
দুর্নীতি, অপশাসন, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বেকারত্বের প্রতিবাদে শুরু হওয়া গণবিক্ষোভের এসব ঘটনা বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পায় ‘আরব বসন্ত’ নামে।
আরব দেশগুলোর মধ্যে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয় মিশরে। কায়রোর তাহরির স্কোয়ারে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী একত্রিত হন এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের পদত্যাগ দাবি করেন।
টানা ১৮ দিন বিক্ষোভ চলার পর মোবারক ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। এর দেড় বছরের মাথায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মিশরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
২০১২ সালের সেই নির্বাচনে মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষ থেকে মুরসিকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়া হয়।
এরপর মুরসি ৫১.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং একই বছরের জুনে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতাগ্রহণ করেন।
জনরোষে গণবিক্ষোভ
ক্ষমতা বসার প্রথম বছর পার না হতেই মুরসি গণবিক্ষোভের মুখে পড়েন।
তার সমালোচকদের মতে, ক্ষমতা গ্রহণের সময় ‘মিশরীয় সকল মানুষের’ রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার যে প্রতিশ্রুতি মুরসি দিয়েছিলেন, পরবর্তীতে তিনি সেটি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
তারা আরো অভিযোগ তুলেছিলেন যে- মিশরের তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মুরসি ইসলামপন্থী তথা মুসলিম ব্রাদারহুডকে একচ্ছত্র আধিপত্যের পথ তৈরি করে দিচ্ছেন।
এছাড়া অর্থনীতির সঙ্কট এবং বেকারত্বের সমস্যাও তখন বেশ প্রকট আকার ধারণ করেছিল।