অবরুদ্ধ গাজার মধ্যাঞ্চল থেকে চার জিম্মিকে উদ্ধার করেছে ইসরাইলি বাহিনী। প্রায় সপ্তাহ খানেক অভিযান পরিচালনার পর ওই চার জিম্মিকে উদ্ধার করেছে তারা। তবে এই চার জিম্মি উদ্ধার করতে গিয়ে মধ্য গাজায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে নেতানিয়াহুর বাহিনী। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে সেখানে শনিবার ভয়াবহ বিমান ও স্থল হামলা করেছে তেল আবিব। যাতে অন্তত ২১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘রক্তাক্ত গণহত্যা’ বলে অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিনির প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি জরুরি ভিত্তিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনের আহ্বান জানিয়েছেন। এসব পরিস্থিতি উল্লেখ করে ইসরাইলি বাহিনীর এই জিম্মি উদ্ধারের বিস্তারিত জানিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, সীডস অব সামার নামে অভিহিত এই অভিযান দিনের বেলায় পরিচলানা করা হয়েছিল।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এর মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে আরও বেশি চমকে দিয়েছে। সকালে সাধারণত রাস্তাগুলো বাজারের কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকে।
এই সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। তবে এতে বেশ ঝুঁকিও নিয়েছেন তারা। কারণ দিনের আলোতে সেখানে প্রবেশ করা এবং সেখান থেকে নিরাপদে জিম্মিদের বের করে নিয়ে আসা বেশ কঠিন ছিল। এই অভিযানে ইসরাইলের বিশেষ বাহিনীর এক প্রতিনিধি নিহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে দেশটির এক কর্মকর্তা।
এই অভিযানের বর্ণনায় ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, এটা এনটেবিতে যে রকম অভিযান ছিল সেরকমই একটা। ১৯৭৬ সালে উগান্ডা থেকে ১০০ জিম্মিকে উদ্ধারে ইসরাইল যে কৌশল নিয়েছিলেন সেদিকেই ইঙ্গিত করেছিলেন আইডিএফের ওই মুখপাত্র।
তিনি বলেছেন, নুসিরাত শরণার্থী শিবিরের যেখানে জিম্মিদের রাখা হয়েছিল সেখানে অভিযান চালিয়েছিল ইসরাইলের স্পেশাল কমান্ডোরা। একটা অ্যাপার্টমেন্টে ২৬ বছর বয়সী একজন জিম্মি নোয়া আরগামানি ছিল। অন্যটিতে ৪১ বছর বয়সী স্লোমি জিভ, ২৭ বছর বয়সী আন্দ্রে কজলভ এবং ২২ বছর বয়সী আলমগ মির জেন ছিল।
হাগারি বলেছেন, জিম্মিরা খাঁচায় আটক ছিল না তবে তাদের ওই কক্ষগুলোতে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল এবং সেখানে বেশ কয়েকজন পাহারাদার ছিলেন। পরে ইসরাইলি কমান্ডোরা জিম্মিদের নিজের শরীর দিয়ে ঘেরাও করে রাখেন এবং নিরাপদে গাড়িতে উঠিয়ে সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করেন। এসময় তারা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিল বলে জানান হাগারি। তিনি বলেন, ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বিস্তারিতভাবে অভিযানের পরিকল্পনা করেছিল। এমনকি প্রশিক্ষণের জন্য জিম্মিদের আটক রাখা কক্ষের নমুনাও তৈরি করেছিল।
বের হওয়ার সময় প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দে কেঁপে ওঠে চারপাশ। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া মোবাইল ফোনের ভিডিওতে দেখা যায়, ক্ষেপণাস্ত্রের গোলাগুলির শব্দে আত্মরক্ষার্থে নিচু হয়ে পড়েছে লোকজন। পরের ফুটেজে রাস্তায় মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। এই অভিযানে ব্যাপকভাবে বেসামরিক লোকজন নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার দুইটি হাসপাতালের চিকিৎসকারা জানিয়েছেন, তারা ৭০টির বেশি মৃতদেহ গণনা করেছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু ও নারী ছিলেন বলে জানিয়েছেন তারা।